স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক চ্যানেল নিউজ : কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় এক গৃহবধূকে জিম্মি করে দুই মাস ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের বিরুদ্ধে। পরে লোকলজ্জার ভয়ে স্বামী-স্ত্রী বিষপান করে আত্মাহত্যার চেষ্টা করেন। বিষপানে স্ত্রী মারা গেলেও স্বামী বেঁচে আছেন।
গত বুধবার (২৯ মে) দুপুরের দিকে উপজেলা সদরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। তবে ঘটনার দুদিন অতিবাহিত হলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসারে অভাব অনটনের কারণে জহির মন্ডলপাড়া গ্রামের জয়নাল আলীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নেন ওই দম্পতি। কিন্তু ধারের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার টাকা চেয়ে বসেন। টাকা নেই বলে জানান তারা। কিছু দিন পর টাকাটা পরিশোধ করবেন বলে জানান। কিন্তু পাওনাদার তার টাকা পুনরায় চেয়ে বসেন এবং টাকা না দিতে পারায় ভুক্তভোগী গৃহবধূকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। পরিবার অভাবগ্রস্ত হওয়ায় তার প্রস্তাব মেনে নেন তিনি এবং জয়নালের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে জয়নাল তার সঙ্গে শুক্কুর আলী নামে একজনকে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরবর্তীতে তারা দুজন আবারও সোলেমান নামে আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করেন এবং সোলেমান গোপনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সোলেমান ফের শারীরিক সম্পর্ক করেন।
এভাবে প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে তিনি অতিষ্ট হয়ে যান। তার স্বামী স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা লোকমুখে জানতে পারেন। পরে কৌশলে স্বামী তার স্ত্রীর মুখে সবকিছু শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে গত শুক্রবার (২৪ মে) স্বামী-স্ত্রী লজ্জায় বিষপান পান করেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসায় স্বামী কিছুটা সুস্থ হলেও। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে মময়মনসিংহ না নিয়ে তারা গত সোমবার (২৮ মে) রাতে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে গত বুধবার (২৯ মে) দুপুরে ওই গৃহবধূ নিজ বাড়িতে মারা যান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয়নাল বলেন, আমি কিছুই জানি না সব মিথ্যা কথা। তবে তিনি টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। ধর্ষণের ঘটনাটি অস্বীকার করলেও ২০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা করার বিষয়টি স্বীকার করেন।
রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিরর বলেন, আমি ঢাকায় রয়েছি। সংঘবদ্ধভাবে গৃহবধূকে ধর্ষণের বিষয়টি শুনেছি। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে খোঁজখবর নিতে বলেছি। যারা অপরাধী তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে রাজীবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান বলেন, নিহতের মামার তথ্যের ভিত্তিতে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি আমরা। যেহেতু এই মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা আসছে। তাই আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে কিছু নেগেটিভ বেরিয়ে আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।